Pray for the world economy

"I AM" বলার দ্বারা যিশু কি নিজেকে ঈশ্বর দাবি করেছেন?

কিংবদন্তী ইসলাম প্রচারক আহমেদ দিদাত(র) এবং তাঁর যোগ্য শিষ্য জাকির নায়েক(হাফিজাহুল্লাহ) খ্রিষ্টধর্মালম্বীদের প্রতি প্রায়ই একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতেন বা দেন, আর তা হচ্ছেঃ বাইবেল থেকে কেবল একটা জায়গা দেখানো হোক যেখানে বলা হচ্ছে যিশু [ঈসা(আ)] নিজে বলছেন - “আমি ঈশ্বর” অথবা “আমার উপাসনা কর”। এমন কিছু যদি পুরো বাইবেলের কোথাও না থাকে, তাহলে যিশুকে ঈশ্বর বলবার যৌক্তিকতা কতটুকু? বলা বাহুল্য যে কখনো কোন খ্রিষ্টান এই দুই কিংবদন্তী প্রচারকের সাথে চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়নি, আলহামদুলিল্লাহ।

 

তবে ইদানিং খ্রিষ্টানদের মাঝে মিশনারী ও মিডিয়া ইভানজেলিস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ডেভিড উড, স্যাম শামুনের মত কিছু খ্রিষ্টান প্রচারক প্রায়শই তাদের মিডিয়াগুলোতে মুসলিমদের সকল যুক্তি ‘খণ্ডণ’ করে ফেলবার দাবি করে আসছেন। তারা বাইবেলের একটা পদ(verse) দেখিয়ে দাবি করে যে যিশু [ঈসা(আ)] সরাসরি নিজেকে ঈশ্বর দাবি করেছেন। আর সেই পদ বা ভার্সটা হচ্ছেঃ

“I tell you the truth,” Jesus answered, “before Abraham was born, I am!”” (John 8:58, NIV Bible)

[আমি তোমাদেরকে সত্যি বলছি। আব্রাহামের (ইব্রাহিম(আ)) জন্মের আগে থেকেই আমি আছি।]

 (যোহন ৮:৫৮; বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটির অনুবাদ)

 

ইংরেজিভাষী খ্রিষ্টানরা দাবি করেঃ এই ভার্সে যিশু বলছেনঃ “I am”। যাত্রাপুস্তক(Exodus) ৩:১৪তে ঈশ্বর নিজের নাম বলতে গিয়ে বলেছেনঃ “I AM”।

“God said to Moses, “I AM WHO I AM. This is what you are to say to the Israelites: ‘I AM has sent me to you.’”  (Exodus 3:14, NIV Bible)

[তখন ঈশ্বর মোশিকে বললেন, “তাদের বল ‘আমি আমিই।’ যখনই তুমি ইস্রায়েলীয়দের কাছে যাবে, তখন তাদের বলবে ‘আমিই’ আমাকে পাঠিয়েছেন।”]   (যাত্রাপুস্তক ৩:১৪; বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটির অনুবাদ)

 

কাজেই এখানে যিশু নিজের ব্যাপারে ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করেছেন। এ ছাড়া তিনি যেহেতু বলতে চাচ্ছেন যে আব্রাহামের জন্মের আগে থেকেই তিনি আছেন, এর মানে পৃথিবীতে আসার আগেও তাঁর এক প্রকারের জীবন ছিল। কাজেই তিনি ঈশ্বর। -- এ হচ্ছে খ্রিষ্টানদের যুক্তি।

 

কিন্তু খ্রিষ্টানদের এই যুক্তিতে কিছু শুভঙ্করের ফাঁকি আছে।

 

প্রথম কথাঃ

এভাবে ‘I am’ বা ‘আমি’ বলার বহু উদাহরণ বাইবেলে দেখা যায়।আদিপুস্তক(Genesis) ২২:১১তে আব্রাহাম [ইব্রাহিম(আ)] বলছেনঃ ‘I am’, যাত্রাপুস্তক(Exodus) ৩:৪এ মোশি [মুসা(আ)] বলছেনঃ ‘I am’, যোহন(John) ৯:৯ এ একজন ভিক্ষুক পর্যন্ত বলছেনঃ ‘I am’। এতগুলো মানুষ এই এক কথা বলেছেন, তাহলে শুধু যিশুকে ঈশ্বর বলে দাবি করার যৌক্তিকতা কী? এ কথা বলে তারা যদি ঈশ্বর না হন, তাহলে যিশুও ঈশ্বর নন।

 

দ্বিতীয় কথাঃ

 যিশু নিশ্চয়ই ইংরেজিতে বা বাংলায় কথাটা বলেননি।বাইবেলের নতুন নিয়মের এই বইগুলো অনুবাদ করা হয়েছে গ্রীক ভাষায় লিখিত কপি থেকে [[ ঈসা(আ) কিন্তু গ্রীক ছিলেন না। কিন্তু খ্রিষ্টানদের কাছে ঈসা(আ) এর নিজ ভাষার কোন ইঞ্জিলের মূল কপি নেই! ]]। মূল গ্রীক বইতে কথাটা কিভাবে বলা আছে তা দেখলেই তাদের যুক্তির শুভঙ্করের ফাঁকি বেড়িয়ে আসে।

 

যাত্রাপুস্তক (Exodus) ৩:১৪এর “তখন তাদের বলবে ‘আমিই’ আমাকে পাঠিয়েছেন”—এখানে ঈশ্বরের নাম হিসাবে বাংলা অনুবাদে ‘আমিই’ এবং ইংরেজিতে “I AM” আছে।কিন্তু ঈশ্বরের নামের স্থলে মূল গ্রীকে আছেঃ ὁ ὤν(হো অন)। গ্রীক সেপ্টুয়াজিন্ট ওল্ড টেস্টামেন্টে এভাবেই গ্রীক শব্দটি আছে।যোহন(John) ৮:৫৮তে মূল গ্রীক বইতে “I am” এর জায়গায় পাওয়া যায়ঃ ἐγὼ εἰμί  (এগো এইমি)। গ্রীক “এগো এইমি” থেকে ইংরেজিতে “I am” ও বাংলায় ‘আমি ছিলাম’ অনুবাদ করা হয়েছে।সেখানে ঈশ্বরের নাম হিসাবে যাত্রাপুস্তকে ব্যবহৃত ὁ ὤν(হো অন) কথাটি নেই।

 

যাত্রাপুস্তক(Exodus) ৩:১৪ এর গ্রীক দেখুন এই সাইট থেকে।

 

আর যোহন(John) ৮:৫৮ এর গ্রীক দেখুন এই সাইট থেকে।

 

কাজেই আমরা দেখছি যেঃ মূল গ্রীকে যাত্রাপুস্তক(Exodus) ৩:১৪ আর যোহন(John) ৮:৫৮তে সম্পূর্ণ ভিন্ন শব্দ ব্যবহার হয়েছে যা অনুবাদের কারণে এক বলে মনে হচ্ছে। অতএব যোহন(John) ৮:৫৮তে যিশু মোটেও ঈশ্বরের নাম আর নিজের নাম এক করেননি। যিশু যদি নিজের ক্ষেত্রে ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করতেনই, তাহলে তো যোহন(John) ৮:৫৮এর লেখক যাত্রাপুস্তক(Exodus) ৩:১৪এ ঈশ্বরের নামের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত শব্দই লিখতেন। কিন্তু মোটেও সেরকম কোন শব্দের ব্যবহার সেখানে  

 

তৃতীয় কথাঃ

এরপরেও খ্রিষ্টানরা আরেকটি যুক্তি দেখাতে পারেন, আর তা হচ্ছেঃ যিশু যোহন(John) ৮:৫৮তে বলছেন যে তিনি আব্রাহামের জন্মের আগে থেকে আছেন। এর মানে পৃথিবীতে আসার আগেও তাঁর অস্তিত্ব ছিল।এবং বাস্তবিকই এই যুক্তি দেখিয়ে খ্রিষ্টানরা দাবি করেন যে এমন বৈশিষ্ট্য ঈশ্বর ছাড়া আর কারো হতে পারে না।কিন্তু খ্রিষ্টানদের এই দাবি তাদের নিজ গ্রন্থ দ্বারাই খণ্ডণ হয়। মুসলিমদের বিশ্বাস হচ্ছেঃ পৃথিবীতে আসার আগে মানুষ ছিল রুহের জগতে, কুরআনে সুরা আ'রাফ এর ১৭২ নং আয়াতে পৃথিবীতে আসার আগেই সকল মানুষের সাথে আল্লাহর কথোপককথনের বিবরণ আছে। কাছেই পৃথিবীতে আসার আগে মানুষের অস্তিত্বের ব্যাপারে মুসলিমদের কোন কনফিউশন নেই, এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। একই রকম বিবরণ বাইবেলেও পাওয়া যায়। বাইবেলে যিরমিয়(Jeremiah) ১:৫ এ বলা আছে যেঃ মাতৃগর্ভে সৃষ্টি করার পূর্বেই ঈশ্বর যিরমিয়কে নির্বাচিত করেছিলেন; জাতিসমূহের কাছে ভাববাদী(নবী) হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। সুতরাং বাইবেল বলছে যেঃ পৃথিবীতে আসবার আগে ভাববাদী যিরমিয় এরও এক প্রকারের “অস্তিত্ব” ছিল। অথচ যিরমিয়কে কিন্তু খ্রিষ্টানগণ ঈশ্বর বলে দাবি করেন না! জন্মের পূর্বে অস্তিত্ব থাকার পরেও যদি যিরমিয় ঈশ্বর না হন, তাহলে যিশুকে কেন ঈশ্বর বলে দাবি করা হবে?? এটা কি ডাবল স্টান্ডার্ড নয়?

 

অতএব খ্রিষ্টানদের নিজ গ্রন্থ বাইবেলের দলিল-প্রমাণ ও যুক্তির ভিত্তিতে এটাই প্রমাণিত হল যেঃ যিশু [ঈসা(আ)] ঈশ্বর নন। তিনি একজন মানুষ ও নবী।